সৌন্দর্য শব্দটিকে কোনো সঠিক সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা না গেলেও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন সভ্যতায় রয়েছে সৌন্দর্যের নানাবিধ সব সংজ্ঞা ও মানদণ্ড। মানব সৌন্দর্যের মানদণ্ডে দৈহিক আকৃতি, চুলের গঠন, ঠোঁটের আকৃতি, ও চোখ থেকে শুরু করে বাদ যায় না পা ও পায়ের আঙুলও! বিশাল প্রাণীজগতের ক্ষুদ্র একটি অংশ মানব সমাজে যেমন রয়েছে সৌন্দর্যের তারিফ, তেমনি এ ঘটনা অন্যসব প্রাণীতেও পরিলক্ষিত হয়। প্রিয়তম কিংবা প্রিয়তমাকে আকর্ষণ অথবা প্রেম নিবেদনের জন্য বিভিন্ন প্রাণীতে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সব দৈহিক ও আচরণগত বৈশিষ্ট্য। কথিত আছে আগের যুগে সুন্দরী রাজকন্যাদের মন জয় করতে রাজ দরবারে হাজির হতো বিভিন্ন রাজ্যের রাজপুত্ররা। বীরত্ব ও বুদ্ধির নানাবিধ প্রদর্শনীর দ্বারা তারা রাজকন্যার মন জয় করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাতো। এ যুগে রাজকন্যার মন জয়ের এই দৃশ্য আর হয়ত কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না, তবে মানব সমাজের বাইরে অন্যান্য প্রাণীতে প্রতিনিয়ত ঘটছে এমন ঘটনা।
তেমনি এক আচরণের গল্প বলবো আজ। ছবির মথটির বৈজ্ঞানিক নাম Taurometopa pyrometalla যাকে বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে জন্মানো ছৈলা (Sonneratia) জাতীয় উদ্ভিদ এদের ক্যাটারপিলারের খাবার। এদের ক্যাটারপিলার ডিম থেকে ফুটে বের হয়েই ছৈলা জাতীয় উদ্ভিদের পাশাপাশি অবস্থিত এক জোড়া কচি পাতা সিল্ক দিয়ে জুড়িয়ে থলের মতো বানিয়ে তার মধ্যে থেকে পাতা খায়। পরিণত ক্যাটারপিলার থলে থেকে বেরিয়ে পার্শ্ববর্তী কাণ্ডে কোকুন বানিয়ে পিউপা দশায় উপনীত হয়।
তবে পরিণত তথা পূর্ণবয়স্ক মথ হবার পরে এদের জীবনে আসে প্রেমের তাড়না। এ সময় বিভিন্ন স্থান থেকে উড়ে এসে একদল পুরুষ ভিড় জমায় এক স্থানে। সবাই মিলে মন জয়ের চেষ্টা করে প্রিয়তমার। স্ত্রী মথের কাছে যে পুরুষের মস্তকের আকার বড় সে পুরুষই বেশী সুদর্শন ও পছন্দনীয়। এক দল পুরুষের এই ভিড় থেকে স্ত্রী মথ তার পছন্দসই বড় মাথা বিশিষ্ট পুরুষকে বাছাই করে তার সাথেই প্রেমে লিপ্ত হয়। প্রাণিবিদ্যার ভাষায় পুরুষদের এমন দলবদ্ধ হয়ে স্ত্রীকে আকর্ষণের বিষয়টিকে 'লেকিং' বলা হয়। স্ত্রী মথ জন্মের পর অপেক্ষারত থাকে কখন নানা রাজ্যের রাজপুত্ররা তার কাছে এসে প্রেমের পরীক্ষা দিবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের!
ছবিগুলো সুন্দরবন, বাংলাদেশ হতে তোলা ২০১৯ ও ২০২০ সালে।
ছবিঃ Taurometopa pyrometalla
Comments