জীবজগৎকে ডোমেইন - কিংডম বিভাজন করার রীতি বেশ পুরনো। একইসাথে ট্রেডিশনাল পাঠ্যপুস্তকের বদৌলতে এ শব্দযুগল সকলেরই চেনা। ডোমেইন ও কিংডমে বিভাজন করার ইতিহাস আজকের লেখার বিষয়বস্তু নয়, যদিও প্রসঙ্গক্রমে দু’চার কথা বলতেই হবে।
শুরুরদিকে নিউক্লিয়াসের গাঠনিক ভিত্তিতে সমস্ত জীবজগৎকে প্রোক্যারিওট এবং ইউক্যারিওট দুইটি ডোমেইনে বিভাজিত করা হলেও ১৯৯০ সালে আমেরিকান অণুজীববিজ্ঞানী কার্ল ওউয়েজ ও তাঁর সহকর্মীগণ 16S rRNA-র ভিত্তিতে জীবজগৎকে ব্যাকটেরিয়া, আরকিয়া (একত্রে প্রোক্যারিওটা) এবং ইউক্যারিয়া নামে তিনটি ডোমেইনে বিভক্ত করেন যদিও সমসাময়িক বিজ্ঞানীদের অনেকেই (যেমন আর্নস্ট মেয়ার) এর বিরোধিতা করেন। বর্তমানকালে ধারণা ও ব্যাখ্যার বদল ঘটলেও তিন ডোমেইন সিস্টেমই প্রায় সর্বজন স্বীকৃত।
![](https://static.wixstatic.com/media/1da808_84c4ab0217b346d79d70c2dcdf49d32d~mv2.png/v1/fill/w_834,h_347,al_c,q_85,enc_avif,quality_auto/1da808_84c4ab0217b346d79d70c2dcdf49d32d~mv2.png)
ছবিঃ তিন ডোমেইন
তবে এ ডোমেইন সিস্টেমে বিভাজনের আগ হতেই কিংডম ধারণা বিদ্যমান ছিলো (ইউক্যারিওটদের) । এরিস্টটলের দুই কিংডম ধারনা হতে শুরু করে ক্যাভালিয়ার-স্মিথের সাত কিংবা আট কিংডম ধারণা পর্যন্ত এক দীর্ঘ ইতিহাস পরিলক্ষিত হয়।
- এরিস্টটল সমস্ত জীবজগৎকে উদ্ভিদ ও প্রাণী মোট দুই কিংডমে বিভক্ত করেন।
- ক্যারোলাস লিনিয়াস ঠিক এরিস্টটলকেই অনুসরণ করেন। কিন্তু কিঞ্চিৎ ভিন্নতা এনে। তিনি জৈব ও অজৈব উভয় দলকে মাথায় রেখে তিন কিংডমের ধারণা দেন। যথাক্রমে- Regnum Lapideum (খনিজ পদার্থ, নুড়িপাথর ইত্যাদি অজৈব পদার্থের কিংডম), Regnum Animale (এনিম্যাল কিংডম) এবং Regnum Vegetabile (উদ্ভিদ কিংডম)।
‘’ইতিহাসের এ পর্যায়ে কিছু কথা বলা উচিৎ। লিনিয়াসের সময় পর্যন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি অনুবীক্ষণীক জীবদেরকে না এরিস্টটল না লিনিয়াস কেউই কোনো কিংডম বা দলের অন্তর্ভুক্ত করেন নি। সহজ কারণ ততদিন পর্যন্ত অণুবীক্ষণযন্ত্র আবিষ্কারই হয় নি। পরবর্তীতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে এক ভিন্ন জীবজগৎ মানুষের নজরে এলে তাদেরকে কোথায় স্থান দেয়া হবে এ নিয়ে বাঁধে বিপত্তি। এর তাৎক্ষণিক সমাধান করার চেষ্টা করেন আর্নস্ট হেকেল।“
- আর্নস্ট হেকেল উদ্ভিদ (Plantae), প্রাণী (Animalia) এবং প্রোটিস্টা (Protista) নামে তিনটি কিংডমের ধারণা দেন।
- পরবর্তীকালে ছত্রাক কিংডমের আবির্ভাব সহ নিত্য নতুন সব বৈচিত্রময়তায় সাজছে কিংডম-ডোমেইনের ধারণাগুলো।
ইতিহাস ও ডোমেইন-কিংডমের আলোচনা অনেক হলো। এবার সরাসরি আলোচনা করবো প্রোটোজোয়া দল নিয়ে। ঐতিহাসিকভাবে প্রোটোজোয়া নামক দলটি কখনো একক পর্ব, আবার কখনো কিংডম হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, যদিও বর্তমানকালে কোনোটিই গ্রহণযোগ্য নয়। ১৮১৮ সালে প্রাণীবিজ্ঞানী জর্জ অগাস্ট গল্ডফাস সর্বপ্রথম ইউগ্লেনা, এমিবা, রটিফার, স্পঞ্জ, জেলিফিশ ইত্যাদি প্রাণীদের নিয়ে প্রোটোজোয়া শব্দটির প্রস্তাবনা দেন যার অর্থ ‘আদি প্রাণী’ এবং তিনি প্রোটোজোয়া কে এনিম্যাল কিংডমের অন্তর্গত একটি ক্লাস বা শ্রেণিতে স্থান দেন। কিন্তু এ ধারণা সমসাময়িক কাল হতেই বিতর্কিত। পরবর্তীতে কেউ কেউ ‘উদ্ভিদ সদৃশ’ এবং ‘প্রাণী সদৃশ’ দুইটি দলে বিভক্ত করার প্রস্তাব দেন। ১৮৪৮ সালে থিওডর শ্বয়ান তাঁর বিখ্যাত ‘কোষতত্ত্বের’ ধারণা প্রকাশ করলে অনেকটা রাতারাতি বদলে যায় প্রোটোজোয়ার হালচাল। বিজ্ঞানীগণ বুঝে যান যে তাঁদের প্রস্তাবিত প্রোটোজোয়ানদের অনেকে এক কোষী (যেমন ইউগ্লেনা) আবার অনেকে বহুকোষী (যেমন রটিফেরা) আর তাই ভন সাইবল্ড ও অন্যান্য বিজ্ঞানীগণ কেবলমাত্র এক কোষীদের প্রোটোজোয়া দলের অন্তর্ভুক্ত রেখে বাকী সবাইকে মেটাজোয়া (বর্তমানকালের প্রাণী বা এনিম্যালিয়া) দলে অনতর্ভুক্ত করেন এবং প্রোটোজোয়া কে এনিম্যাল কিংডমের একটি সাবকিংগডম আবার কেউ ফাইলাম/পর্ব হিসেবে স্থান দেন। পরবর্তীকালে আবিষ্কৃত হয় প্রোটোজোয়ানদের উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়ের মত সংকর আচরণ। আর তখন থেকেই সমস্যা বাঁধে প্রোটোজোয়ানদের স্থান নিয়ে। কেউ বলেন প্রাণী আবার কেউ তো উদ্ভিদ। আর্নস্ট হেকেল সমসাময়িক সময়ে প্রোটিস্টা জগতের প্রস্তাব দিয়ে প্রোটোজোয়াকে এ জগতের অন্তর্ভুক্ত করেন আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি। কিন্তু দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিকালে হুইটাকার, কোপল্যান্ড, মারগুলিস প্রমুখ জীববিজ্ঞানীগণ মাল্টিপল কিংডম সিস্টেমের ধারণা দিয়ে জীবজগতকে উদ্ভিদ, প্রাণী, ছত্রাক, প্রোটিস্টা ইত্যাদি জগতে বিভক্ত করেন। ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের বইসমুহ কখনো প্রোটোজোয়াকে প্রাণী, কখনো প্রোটিস্ট কিংবা কখনো প্রাণী ও উদ্ভিদের যোগসূত্র আবার কখনো আদি প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করে আসছে যদিও একটি ধারণাও বর্তমানকালের ধারণা অনুযায়ী সঠিক নয়। এতক্ষণ যাদের কথা (প্রোটোজোয়া) বললাম, এক নজরে তাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ জেনে নেয়া যাক-
প্রোটোজোয়ানরা এককোষী ,অধিকাংশ আনুবীক্ষণিক সুকেন্দ্রিক অর্গ্যানিজম যাদের-
১। সব ধরণের প্রতিসাম্যতা ও পরিবর্তনশীল আকৃতি (যেমন এমিবা) বিদ্যমান।
২। কোনো জার্ম লেয়ার নেই ।
৩। অঙ্গ ও কলা অনুপস্থিত (তবে জটিল অঙ্গাণু বিদ্যমান)
৪। নিউক্লিয়াস একক বা একাধিক।
৫। মুক্তজীবি অথবা পরজীবী জীবন।
৬। সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া সবাই সচল এবং চলনাঙ্গ সিলিয়া, ফ্লাজেলা, সিউডোপড কিংবা সরাসরি কোষীয় চলন।
৭। পুষ্টিগ্রহণ পদ্ধতি সকল ধরণের ( যেমন উদ্ভিদের ন্যায় স্বভোজী, প্রাণীর ন্যায় পরভোজী ইত্যাদি)।
৮। জলচর অথবা স্থলচর।
৯। জনন পদ্ধতি অযৌন (যেমন ফিশন, বাডিং ইত্যাদি) কিংবা যৌন (কনজুগেশন, সিনগ্যামি)।
১০। একক কিংবা কলোনি গঠনকারী।
![](https://static.wixstatic.com/media/1da808_bebb3a930bb84efaaa3e2ff99abedb8e~mv2.png/v1/fill/w_671,h_263,al_c,q_85,enc_avif,quality_auto/1da808_bebb3a930bb84efaaa3e2ff99abedb8e~mv2.png)
ছবিঃ একটি ইউগ্লেনা
ঐতিহাসিকভাবে এটি পরিষ্কার যে প্রোটোজোয়ানদের উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর অবস্থান মেলে প্রোটিস্টা জগতে। যেখানে শুধুমাত্র প্রাণী সদৃশ দলদেরকেই প্রোটোজোয়া নামে ডাকা হয়।
প্রোটোজোয়ানদের বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাসঃ
১। Hausmann and Hülsmann (1996) এবং Janovy (2005) ক্লাসিফিকেশন অনুযায়ী প্রোটিস্টা/প্রোটোজোয়ানদের ফাইলাম বা পর্বসমুহ-
Kingdom:Protista
- Phylum Chlorophyta
- Phylum Retortamonada
- Phylum Axostylata
- Phylum Euglenozoa
- Phylum Apicomplexa
- Phylum Ciliophora
- Phylum Dinoflagellata
এবং Ameba, Rhizopoda, Granuloreticulosa ও Actinopoda নামক দলদেরকে আলাদা রাখা হয় কারণ তাদের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ।
২। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের পাঠ্যসূচী অনুযায়ী প্রোটিস্টা জগতকে ১৬ টি ফাইলাম বা পর্বে বিভক্ত করা হয়। যথা-
![](https://static.wixstatic.com/media/1da808_ffe5eea87a2c44e99b1025dab3b77509~mv2.png/v1/fill/w_980,h_813,al_c,q_90,usm_0.66_1.00_0.01,enc_avif,quality_auto/1da808_ffe5eea87a2c44e99b1025dab3b77509~mv2.png)
![](https://static.wixstatic.com/media/1da808_6d990f90fdf84e238311327244dab94b~mv2.png/v1/fill/w_980,h_602,al_c,q_90,usm_0.66_1.00_0.01,enc_avif,quality_auto/1da808_6d990f90fdf84e238311327244dab94b~mv2.png)
বর্তমান ক্লাসিফিকেশনঃ
প্রশ্ন জাগতে পারে প্রোটোজোয়ানদের এ ক্লাসিফিকেশন তো ঠিকই আছে, তারা না প্রাণী না উদ্ভিদ, আলাদা দল বা আলাদা জগত। তারপরেও ক্লাসিফিকেশন বা ট্যাক্সোনমিতে বদলাবদলির কি দরকার? দরকার আছে অবশ্যই। বিগত কয়েক দশকে জিনতত্ত্বের অভুতপুর্ব উন্নতির ফলে বিবর্তনবাদ একটি সুপ্রতিষ্ঠিত তত্ত্বে রূপান্তরিত হয়েছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় হেনিং, মিশেল প্রমুখ বিজ্ঞানীদের হাত ধরে আসে বিবর্তনীয় ট্যাক্সোনমি, ক্লাডিস্টিক্স ইত্যাদির ধারণা।
লিনিয়ান ক্লাসিফিকেশন সিস্টেম বৃহদাংশে মর্ফোলজি ভিত্তিক কিন্তু বর্তমানকালীন বিবর্তনীয় ক্লাসিফিকেশন জিন ভিত্তিক। আর তাই ধীরে ধীরে লুপ্ত হচ্ছে লিনিয়ান ট্যাক্সোনমির ধারণা। হয়ত অদূর ভবিষ্যতে স্থান নিবে সম্পুর্নরুপে বিবর্তনীয় ট্যাক্সোনমি। সে যাই হোক, বর্তমানের লিনিয়ান ট্যাক্সোনমি আর যাই করুক না কেন একটা জিনিস ঠিকই মেনে নিয়েছে আর সেটি হচ্ছে মনোফাইলির ধারণা।
মনোফাইলি বলতে কি বুঝায়ঃ বিবর্তনীয় ট্যাক্সোনমিতে ফাইলাম, ক্লাস, অর্ডার ইত্যাদি নামে কিছু নেই। সবই ক্লেড। সংজ্ঞানুযায়ী ক্লেড বলতে একদল অর্গ্যানিজমকে বোঝায় যারা একই সাধারণ পুর্বপুরুষ হতে বিবর্তিত হয়েছে। লিনিয়ান ট্যাক্সোনমি অনুসরণকারী ট্যাক্সোনমিস্টগনও তাদের প্রতিটি ট্যাক্সনে (যেমন ফ্যামিলি, ক্লাস ,অর্ডার) ওইসব অর্গ্যানিজমদেরই স্থান দিচ্ছেন যাদের পূর্বপুরুষ একই। একেই বলা হয় মনোফাইলি আর এই দল/ক্লেড কে বলা হয় মনোফাইলেটিক দল/ক্লেড। যেমন ডায়নোসর, পাখী ও অন্যান্য সরীসৃপ একই পূর্বপুরুষ হতে বিবর্তিত। পুর্বেকার ট্যাক্সোনমিতে ডায়নোসর, অন্যান্য সরীসৃপ ও পাখী আলাদা আলাদা দলে (রেপটিলিয়া ও এভিস) স্থান দেয়া হলেও বর্তমানকালে এরা সবাই একই দলভুক্ত, বর্তমানকালের ধারণা অনুযায়ী পাখীও ডায়নোসর। কারণ এদের সবার পূর্বপুরুষ এক। সুতরাং দেখা যাচ্ছে লিনিয়ান ট্যাক্সোনমির প্রাচীন ধারণা বিভ্রান্তিকর বিধায় বদলে যাচ্ছে দিন দিন। আবার ধরা যাক লিনিয়ান ট্যাক্সোনমির পিশিস দলের একটি শ্রেণী Sarcopterygii র কথা। ঐতিহাসিকভাবে এ দলে শুধুমাত্র সিলাকান্থ জাতীয় মাছেদের স্থান দেয়া হলেও বর্তমানে Sarcopterygii দলভুক্ত আমরা মানুষ সহ অন্যান্য সকল চতুষ্পদীরাও (Tetrapoda)। কারণ সিলাকান্থ জাতীয়দের ন্যায় একদল পুর্বপুরুষ হতে সরাসরি আজকের চতুষ্পদী প্রাণী এবং জীবিত সিলাকান্থদের আবির্ভাব। তাই মনোফাইলির নিয়মানুসারে আমরাও Sarcopterygii দলভুক্ত।
আবার ধরা যাক পুর্বেকার এইপ জাতীয় প্রাণীদের শ্রেণিবিন্যাস। আগেকারদিনে মানুষ (Homo), গরিলা (Gorilla), শিম্পাঞ্জীদের (Pan) বাহ্যিক বৈশিষ্ঠ্যের ভিত্তিতে Pongidae (গরিলা ও শিম্পাঞ্জী) এবং Hominidae (মানুষ) দুইটি আলাদা পরিবার/ফ্যামিলিতে স্থান দেয়া হত। কিন্তু অধিকমাত্রার জিনগত গবেষণা হতে এটি প্রমাণিত যে মানুষ, গরিলা ও শিম্পাঞ্জী একই সাধারণ পুর্বপুরুষ হতে বিবর্তিত। সুতরাং মনোফাইলির নিয়মানুসারে এদের সবাইকে আলাদা আলাদা নয় বরং একই দলে স্থান দিতে হবে আর তাই বর্তমানে এদের সবাইকে একই ফ্যামিলি Hominidae তে স্থান দেয়া হয়।
![](https://static.wixstatic.com/media/1da808_f9e3d4bc924b4d8b84e818154105016d~mv2.png/v1/fill/w_674,h_402,al_c,q_85,enc_avif,quality_auto/1da808_f9e3d4bc924b4d8b84e818154105016d~mv2.png)
ছবিঃ এদের সকলের পূর্বপুরুষ এক, তাই একই দলভুক্ত
সুতরাং বর্তমানকালের সংজ্ঞা ও ধারণায় প্রোটোজোয়া কিংবা প্রোটিস্টা তখনই টিকবে যদি তারা মনোফাইলেটিক হয়।দেখে নেয়া যাক আসলে তারা মনোফাইলেটিক কিনা।অনেক বিজ্ঞানীর অক্লান্ত পরিশ্রমের দ্বারা বৃহৎ জিনগত পর্যায়ে অজস্র গবেষণার দ্বারা ইউক্যারিওটদের ফাইলোজেনী বা জাতিজনি নিরূপণ করা হয়। নিচে সংক্ষেপে একটি সরল ফাইলোজেনেটিক ট্রি এর ছবি নিয়ে আলোচনা করা হলো-
![](https://static.wixstatic.com/media/1da808_d60111113666484c8957d67c26c94581~mv2.png/v1/fill/w_583,h_828,al_c,q_90,enc_avif,quality_auto/1da808_d60111113666484c8957d67c26c94581~mv2.png)
মনোফাইলির নিয়মানুসারে আমাদের বহুল আলোচিত প্রোটোজোয়া কিংবা প্রোটিস্টা একটি একক দল হতে হলে তার অন্তর্ভুক্ত সবাইকে একই পুর্বপুরুষ হতে বিবর্তিত হতে হবে। সহয কথায় আমরা পুর্বে প্রোটিস্টার যে ফাইলামগুলো (সাত কিংবা ১৬ টি) দেখেছি সবাইকে একই দলভুক্ত ও একই পুর্বপুরুষ হতে বিবর্তিত হতে হবে। কিন্তু উপরের ছবিতে আমরা সম্পুর্ন ভিন্ন ও চাঞ্চল্যকর ব্যাপার দেখতে পাই। ছবিতে তীর চিহ্নিত স্থান মানে পুর্বপুরুষ ও এর পরবর্তী শাখাপ্রশাখাসমুহ বংশধর। ছবিতে স্পষ্ট আগেকার প্রোটিস্টার অন্তর্ভুক্ত দলসমুহ এক স্থানে নেই। কেউ SAR দলভুক্ত, কেউ Archaeplastida দলভুক্ত, কেউ Excavata দলভুক্ত আবার কেউ নিজস্ব দলের অন্তর্ভুক্ত যেমন Amoebozoa । সুতরাং এখান হতে স্পষ্ট যে না তো প্রোটোজোয়া আর না তো প্রোটিস্টা কেউই মনোফাইলির নিয়মে টিকছে না। সুতরাং প্রোটোজোয়া কিংবা কিংডম প্রোটিস্টা বলে আলাদা স্বতন্ত্র কিছুর আর অস্তিত্ব নেই। পূর্বেকার প্রোটোজোয়া বা প্রোটিস্টার অন্তর্ভুক্ত দলসমূহ এখন অন্য বিভিন্ন দলের অন্তর্ভুক্ত।
তাহলে প্রোটোজোয়া (প্রাচীন ধারণা অনুযায়ী) কি জীব নাকি অন্যকিছু?
অবশ্যই জীব। উপরের ছবিতে দেখতেই পাচ্ছি সবাই ইউক্যারিওট দলভুক্ত। আর এদের সবারই সুগঠিত কোষ, মেটাবোলিজম, উদ্দীপনা, ভারসাম্যতা রয়েছে। তাই সবাইই জীব।
তাহলে প্রাণী কারা?
উপরের ছবিতে মেটাজোয়া নামক দলের সবাইই প্রাণী। ছবিটিকে আবার আংশিকভাবে দেখা যাক-
![](https://static.wixstatic.com/media/1da808_f44bc2ebd66b4f25b1b43fccb0e7bc47~mv2.png/v1/fill/w_667,h_233,al_c,q_85,enc_avif,quality_auto/1da808_f44bc2ebd66b4f25b1b43fccb0e7bc47~mv2.png)
এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি Choanoflagellata, Metazoa, Icthyosporea এবং Fungi সবাই একই দল Opisthokonta –র অন্তর্ভুক্ত কারণ এদের সবার পূর্বপুরুষ এক, এবং এদের প্রায় সবার একক ফ্লাজেলাবিশিষ্ট সামনের দিকে চলমান কোষ (যেমন মানুষের শুক্রাণু) বিদ্যমান। আর এ দলের শুধুমাত্র Metazoa দলটিই প্রাণী। বাকী সবাই জীব, কিন্তু প্রাণী নয়। এ ছবি হতে আরেকটি ব্যাপার পরিষ্কার যে ছত্রাক ও প্রাণী একই দলভুক্ত। প্রাণীর/মেটাজোয়ার বৈশিষ্ট্য-
১। বহুকোষী।
২। প্রায় সবাই জৈবিক বস্তু আহার করে।
৩। শ্বসনে অক্সিজেন গ্রহণ করে।
৪। চলন, প্রজনন ইত্যাদি বিদ্যমান।
৫। ভ্রুনীয় ব্লাস্টুলা দশা বিদ্যমান।
সুতরাং এ সংজ্ঞানুযায়ী প্রোটোজোয়ানরা কোনোভাবেই প্রাণী নয়।
সারমর্মঃ
বর্তমান ধারণা অনুযায়ী প্রোটোজোয়া কোনো একক বা স্বতন্ত্র দল নয়। এরা প্রাণীও (মেটাজোয়া) নয় আবার উদ্ভিদও (ভিরিডিপ্লান্টি) নয়। এরা আলাদা জীব।
কৃতজ্ঞতাঃ
1. Adi, MS et al. (2012) The revised classification of eukaryotes. J Eukaryot Microbiol. 59(5): 429-493
2. Hickman, et l.(2008), Integrated Principles of Zoology (14th ed.), New York : McGraw-Hill, ISBN 978–0–07–297004–3
3. Katz LA, Grant JR (2014) Taxon-rich phylogenomic analyses resolve the eukaryotic tree of life and reveal the power of subsampling by sites. Syst Biol 64:406–415
4. McInerney JO, O’Connell MJ, Pisani D (2014) The hybrid nature of the Eukaryota and a consilient view of life on earth. Nat Rev Microbiol 12:449–455
Websites-
Comments