top of page

প্রকৃতিতে নিখুঁত গঠন বলে আদতে কিছু আছে?

কীটপতঙ্গদের বিবর্তনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ হলো এদের উড্ডয়ন বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন। কীটপতঙ্গের পূর্বপুরুষের ফ্লাইট বা উড্ডয়ন বৈশিষ্ট্য ছিলো ডাইরেক্ট টাইপ। যেখানে ওদের চারটি ডানার সাথে আলাদা আলাদাভাবে প্রতিটি ডানার গোড়ায় সরাসরি ফ্লাইট মাসল / উড্ডয়ন পেশি সংযুক্ত হয়ে নিয়ন্ত্রণ করতো ডানার সঞ্চালন। আর এজন্য ওরা প্রতিটি ডানা আলাদাভাবে যেমন খুশি সঞ্চালনের ক্ষমতা রাখে। এ বৈশিষ্ট্য এখনও দেখা যায় আদিমতম কিছু পতঙ্গে বিশেষ করে ড্রাগনফ্লাই ও ড্যামসেলফ্লাইদের মাঝে।


ছবিঃ Indirect ও Direct টাইপ ফ্লাইট মাসল। (এখানে লাল ও পিংক রঙ দিয়ে মাসল আঁকা। লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে ডাইরেক্ট টাইপে মাসল সরাসরি ডানার গোড়ায় সংযুক্ত অন্যদিকে ইনডাইরেক্ট টাইপে মাসল ডানার সাথে সংযুক্ত নয়)


কিন্তু বাকী কীটপতঙ্গের মাঝে দেখা যায় ভিন্ন রকম উড্ডয়ন বৈশিষ্ট্য যা ইনডাইরেক্ট টাইপ হিসেবে পরিচিত। এ ধরণের ক্ষেত্রে এসব কীটপতঙ্গের ডানা সঞ্চালনকারী পেশীগুলো সরাসরি ডানার সাথে সংযুক্ত না থাকায় সবগুলো ডানা একত্রে সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে। আর এজন্য এসব কীটপতঙ্গের মাঝে রয়েছে চার ডানা থেকে দুই ডানা বানানোর এক মজার প্রবণতা।

যেমনঃ মশা-মাছির মাঝে পেছনের ডানা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে হল্টেয়ারে পরিণত হয়েছে, পিঁপড়া-বোলতা-মৌমাছিদের চার ডানা হাইমেন নামক সন্ধি/জয়েন্ট দিয়ে একত্রিত হয়ে এক জোড়া ডানার মতো বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে, মথ-প্রজাপতিতে আবার আছে বিশেষ ধরণের লকিং মেকানিজম যার দ্বারা এরা ওড়ার সময় প্রতি পাশের ডানাদ্বয়কে একসাথে লক করে রাখে এমনভাবে যেনো ওখানে দুইটি নয় বরং একটি ডানা, আবার বীটল বা গুবড়েপোকার মাঝে দেখা যায় ওদের পশ্চাৎ ডানাই কেবল উড্ডয়নে কাজে লাগে অন্যদিকে সম্মুখডানা শক্ত হয়ে উড্ডয়ন ধর্ম হারিয়ে পরিণত হয়েছে এলিট্রায় যার কাজ পশ্চাৎ ডানা ও বীটলের দেহকে সুরক্ষা প্রদান।


ছবিঃ চিৎপটাং বীটল

(উৎসঃ iStock)


অর্থাৎ একটি সমস্যা (ফ্লাইট মাসল সংযুক্তির ভিন্নতা) সমাধানে বীটলে গড়ে উঠেছে আরেকটি বৈশিষ্ট্য (এলিট্রা) যা সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি আবার বাড়তি সুবিধাও দিচ্ছে সেটা হলো সুরক্ষা। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এলিট্রা বুঝি এক নিখুঁত গঠন, কি চমৎকার এর বিবর্তন ইতিহাস। কিন্তু সুবিধা দিলেও এলিট্রার আবার রয়েছে একটি বড় রকমের সমস্যা। সেটি হলো, এলিট্রার জন্য বীটলের দেহ গম্বুজ আকৃতির হয়ে উঠেছে। আর এজন্য কোনো বীটল চিৎপটাং হয়ে উলটে গেলে, সোজা হওয়া প্রায় অসম্ভব। তখন ওর পক্ষে নিস্ফল অনবরত পা নাড়িয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা ছাড়া সাধারণত আর কোনো বিশেষ পথ বাকী থাকে না।

প্রশ্ন হলো, এলিট্রার যদি সমস্যাই থাকে তবে ন্যাচারাল সিলেকশনে কেনো টিকে গেলো এ বৈশিষ্ট্য টি? এর কারণ হলো এলিট্রার সমস্যা থাকলেও অভিযোজনিক সুবিধা অনেক বেশী। এই এলিট্রাই বীটলদের এত এত বৈচিত্র্যময় হতে সাহায্য করেছে বিবর্তনের গতিপথে। আর তাইতো বীটলরা সব কীটপতঙ্গের মধ্যে সবচাইতে বেশী বৈচিত্র্যময়। কি অবাককর! তাহলে কি জগতে নিখুঁত গঠন বা বৈশিষ্ট্য বলে আদৌ কিছু নেই!! এটি বেশ চমৎকার একটি ভাবনার বিষয়!

4 views0 comments

Comentários

Não foi possível carregar comentários
Parece que houve um problema técnico. Tente reconectar ou atualizar a página.

Many leaves, one tree; we're all connected

Contact Me

  • Screenshot 2023-09-06 103939
  • Black Facebook Icon
  • Black Twitter Icon

Thanks for submitting!

©2023, Md. Jahir Rayhan

bottom of page