প্রাণী হিসেবে আমাদের জীবনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আত্মরক্ষা। একান্ত ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের মানব সমাজে রয়েছে হাজারো স্তরের সব আত্মরক্ষার কলাকৌশল। শত্রুর হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর লড়াই জীবজগতের এক অতি প্রাচীন বৈশিষ্ট্যের নাম। শত্রুর সাথে লড়াইয়ে কখনওবা কোনো কোনো জীবের ঘটে থাকে বংশ সমেত বিলুপ্তি কখনও আবার ঘটে থাকে দুর্দান্ত সব বিবর্তন। আত্মরক্ষার্থে বিভিন্ন জীবের রয়েছে চমৎকার সব ব্যবস্থা। যেমনঃ টিকটিকিটার কথাই ধরা যাক, বিপদের আঁচ পেলেই লেজ ফেলে পালিয়ে যায়, পড়ে থাকা লেজ দেখে বিচলিত হয়ে যায় শত্রু। কি চালাক অই ছোট্ট টিকটিকি, তাই নয় কি!
এ লেখায় আমরা জানবো প্রাণীজগতের এক নান্দনিক সদস্য বর্ণিল ডানার প্রজাপতি আর তাদের জাতভাই মথের আত্মরক্ষার নানারকম সব কলাকৌশল আর ছলচাতুরী নিয়ে। আত্মরক্ষার্থে এই প্রাণীগুলো আশ্রয় নেয় বুদ্ধিদীপ্ত সব চালাকি আর চতুরতার। কখনও দৈহিক গঠনে আবার কখনও আচরণে প্রজাপতি ও মথ চমৎকারভাবে ধোঁকা দেয় শিকারীদের। ডিম হতে পূর্ণবয়স্ক- এদের জীবনের প্রতিটি দশাতেই দেখা যায় নানাবিধ কলাকৌশল।
ডিমের যত ছলাকলাঃ
১৬৫১ সালে ইংরেজ শারীরতত্ত্ববিদ উইলিয়াম হার্ভে বলেছিলেন- ‘omne vivum ex ovo’ অর্থাৎ, প্রতিটি জীবের জীবনের সূচনা ডিম হতে (যদিও সকল জীবের ক্ষেত্রে এ কথাটি প্রযোজ্য নয়)। প্রজাপতি আর মথও এর ব্যতিক্রম নয়। ডিম হতেই যেহেতু প্রজাপতির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বেরিয়ে আসবে, সেহেতু ডিমগুলো সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রজাপতিদের মাঝে রয়েছে বিভিন্ন আত্মরক্ষা ব্যবস্থা। বিভিন্ন সরীসৃপ যেমন তাদের ডিম পাহারা দেয়, প্রজাপতিদের মাঝে নেই এমন কোনো ব্যবস্থা। কারণ প্রজাপতিরা সঙ্গম শেষে ডিম পেড়েই মরে যায়। আর এজন্য ডিমের সুরক্ষায় স্ত্রী প্রজাপতি বেশ চতুরতার পরিচয় দিয়ে থাকে। কখনো এরা বিক্ষিপ্তভাবে একটি একটি ডিম পাড়ে বিভিন্ন উদ্ভিদের উপর। আকারে ছোটো হওয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা এ ডিমগুলো সহজে নজরে পড়ে না শিকারী প্রাণীদের। কখনো আবার একসাথে অনেকগুলো ডিম পাড়ে পাতার অঙ্কীয় দিকে। কখনো আবার বিভিন্ন উদ্ভিদের গায়ে থাকা কাঁটার গোড়ায় ছোট্ট একটি ডিম পাড়ে যা সহজে নজরে পড়ে না কোনো শিকারী প্রাণীর। অনেকক্ষেত্রেই ডিমগুলো এমন রঙের হয় যাতে সহজেই মিশে যেতে পারে গাছের সাথে (রঙের খেলায় পরিবেশের সাথে নিজেকে মিলিয়ে লুকিয়ে থাকার বিষয়টিকে বলে ক্যামোফ্লাজ)।
মথের ডিমেও দেখা যায় চমৎকার সব আত্মরক্ষার ভোজবাজি। এক ধরণের মথ আছে যারা তুশক মথ নামে পরিচিত। এ মথের স্ত্রী সদস্যদের লেজের দিকে ফুলের মতো চুলের গোছা দেখা যায় যা কোরেথ্রোগাইন (Corethrogyne) নামে পরিচিত পতঙ্গবিদদের মাঝে। ডিম পাড়ার সময় এসব স্ত্রী মথ ডিমের উপর ছড়িয়ে দেয় এ চুলগুলো। বিষাক্ত হওয়ায় এ চুলের ভয়ে সহজে ডিমের ধারেকাছে আসে না কোনো শিকারী প্রাণী।
![](https://static.wixstatic.com/media/1da808_96c0beee95e84db8bc659bbe693f959f~mv2.jpg/v1/fill/w_525,h_642,al_c,q_80,enc_avif,quality_auto/1da808_96c0beee95e84db8bc659bbe693f959f~mv2.jpg)
ছবিঃ প্রজাপতির ডিম। এমনভাবে পেড়ে রেখেছে যে খুঁজে পাওয়া মুশকিল
শুঁয়াপোকার চালাকিঃ
প্রজাপতি আর মথের ডিম ফুটে বের হয় শুঁয়াপোকা যাদের জীবনের মাত্র তিনটি লক্ষ্য- খাওয়া, আত্মরক্ষা আর অদূর ভবিষ্যতে প্রজাপতি কিংবা মথ হবার প্রস্তুতি নেয়া। অনেক মথ আছে (যেমনঃ সিল্ক মথ) যারা শুঁয়াপোকা দশায় প্রচুর খাবার খেয়ে পুষ্টি জমিয়ে রাখে আর তাই পূর্ণবয়স্ক দশাতে আর খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। খাদ্য হিসেবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এরা বিভিন্ন উদ্ভিদের মূল থেকে পাতার নানান অংশ খেয়ে থাকলেও অনেক প্রজাতি আবার ছত্রাক, শৈবাল, লাইকেন, মস, অন্যান্য পতঙ্গ, বিভিন্ন প্রাণীর মল, মৃতদেহ, শুকনো পাতা এমনকি নিজেরা নিজেদেরও খেয়ে থাকে (Cannibalism)। শুঁয়াপোকা দশাটি প্রজাপতি আর মথের জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায় তাই এই দশাতে এরা দুর্দান্ত সব আত্মরক্ষার কলাকৌশল প্রদর্শন করে থাকে শিকারী প্রাণীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য।
শুঁয়াপোকার সব রকমের শত্রুর মধ্যে বোলতা বেশ মারাত্মক। বিবর্তনের গতিপথে বোলতা, শুঁয়াপোকা আর উদ্ভিদের মাঝে গড়ে উঠেছে এক ত্রি-স্তরী জটিল সম্পর্ক। যখন কোনো শুঁয়াপোকা উদ্ভিদের পাতা খেতে থাকে তখন বিভিন্ন উদ্ভিদ এ বিষয়টি টের পেয়ে তাদের বিপাকীয় নানাবিধ বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্বায়ী রসায়নিক ছড়িয়ে দেয় বাতাসে চমৎকার এক বার্তা হিসেবে। উদ্ভিদের থেকে পাঠানো এ রাসায়নিক বার্তা দূর থেকে শনাক্ত করতে পারে উদ্ভিদের বন্ধু বোলতা। বোলতার মাথার দুইদিকে বিদ্যমান এন্টেনায় রয়েছে এসব রাসায়িক শনাক্তের জন্য বিশেষায়িত সব সংবেদী রোম বা সেনসিলা। বার্তা পেয়ে উদ্ভিদের বন্ধু বোলতা উড়ে আসে উদ্ভিদের কাছে আর শত্রু শুঁয়াপোকাকে দেয় বিভিন্ন রকম শাস্তি, একই সাথে ব্যবহার করে নিজ প্রয়োজনে। কখনোবা স্ত্রী বোলতা হুল ফুটিয়ে প্যারালাইসিস করে দেয় শুঁয়াপোকাদের। আর তারপর ডিম পাড়ে শুঁয়াপোকার দেহে। বোলতার ডিমগুলো যাতে শুঁয়াপোকার দেহে সুরক্ষিত থাকে এজন্য রয়েছে আরেক দারুণ ব্যবস্থা। বিভিন্ন রকমের ভাইরাসের বসবাস স্ত্রী বোলতার দেহে। ডিম পাড়বার সময় ডিমের সাথে এসব ভাইরাসের বংশগতীয় বস্তুও (জিন) ঢুকে পড়ে বোলতার দেহে। ভাইরাসের জিন গিয়ে তার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে তথা প্রোটিন উৎপাদন করে বেচারা শুঁয়াপোকার দেহে। ভাইরাসের জিন হতে উৎপন্ন এ প্রোটিন নষ্ট করে দেয় শুঁয়াপোকার দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আর তাইতো ভাইরাসের সহায়তায় স্ত্রী বোলতার ডিমগুলো সুরক্ষিত থাকে শুঁয়াপোকার দেহে। ডিম ফুটে বেরিয়ে আসে বোলতার বাচ্চারা যারা শুঁয়াপোকার দেহের নরম অংশগুলো খেয়ে ধ্বংস করে শুঁয়াপোকাকে। কখনো আবার স্ত্রী বোলতা শুঁয়াপোকাদের ধরে নিয়ে যায় ওদের মাটির তৈরি বাসায়। তারপর ডিম পাড়ে শুয়াপোকার দেহে। কি অসাধারণ এক সম্পর্কের জালে আবদ্ধ প্রকৃতির এক জীবের সাথে আরেক জীব ভাবতেই অবাক লাগে। এজন্যই আমাদের মানুষদের নানাবিধ ধ্বংসাত্মক কাজের দ্বারা একটি জীবের ক্ষতি হলে ভেঙে পড়ে সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক ছন্দ।
![](https://static.wixstatic.com/media/1da808_e85ed09c9213492e8b0bcf7fefdd00f4~mv2.png/v1/fill/w_956,h_423,al_c,q_90,enc_avif,quality_auto/1da808_e85ed09c9213492e8b0bcf7fefdd00f4~mv2.png)
বোলতা সহ পাখী ও অন্যান্য সরীসৃপ এবং আরো সব শিকারী প্রাণিদের হাত থেকে বাঁচতে বিভিন্ন শুঁয়াপোকা চমৎকার সব চালাকির পরিচয় দিয়ে থাকে।
অনেক শুঁয়াপোকাই আত্মরক্ষার্থে আশ্রয় নেয় ক্যামোফ্লাজ এর। অনেকে আবার গাছের পাতা মুড়িয়ে, পাতা কেটে কিংবা পাতা ভাঁজ করে চমৎকার সব গঠন বানিয়ে তার মধ্যে লুকিয়ে থাকে। থলের কীট বা ব্যাগওয়ার্ম (Bagworm) নামে এক দল মথ আছে যারা শুঁয়াপোকা দশায় গাছের ডাল, শুকনো পাতা, পাখির পালক ইত্যাদি একত্রিত করে সিল্কগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত সিল্ক দিয়ে একটার পর একটা শুকনো ডাল বা অন্য উপাদান লাগিয়ে নান্দনিক গঠন আর বাহারী সব কারুকাজের থলে বানিয়ে তার মধ্যে লুকিয়ে থেকে গাছের পাতা খায়। বাংলাদেশী এক গবেষণায় দেখা যায় যে ব্যাগওয়ার্ম মথের এসব ব্যাগ বা থলে এদেরকে পিঁপড়া সহ বিভিন্ন শিকারীদের হাত থেকে বঁচিয়ে রাখে। এ মথের থলে নিয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন উপজাতিদের মাঝে আবার আছে নানাবিধ সব বিশ্বাস। কেউ মনে করে এসব থলেতে আছে নানা রোগের নিরাময় আবার কিছু উপজাতির নারীদের বিশ্বাস এসব ব্যাগ চূর্ণ করে স্বামীদের খাওয়ালে স্বামী বাধ্য হবে স্ত্রীর!
কিছু প্রজাতির প্রজাপতি আছে যাদের মাথায় দেখা যায় শিঙের মতো উপবৃদ্ধি। এসব ব্যবহার করে এরা বোলতার হাত থেকে বেঁচে থাকে। যখনই কোনো বোলতা হুল ফোটাতে আসে তখনই এ শিঙ ব্যবহার করে প্রতিহত করে শিকারীকে। কতক প্রজাপতি আত্মরক্ষায় তো ব্যবহার করে দেহরক্ষী! রাস্তার দুই পাশে ঘাস বা ঝোপের মাঝে উড়ে বেড়ায় যে ছোটো আকারের প্রজাপতিরা, ওদের শুঁয়াপোকার দেহ থেকে ক্ষরিত হয় চিনি-জাতীয় রাসায়নিক। চিনির লোভে তাই পিঁপড়া এসে সারাক্ষণ ভিড় জমিয়ে থাকে এসব শুঁয়াপোকার চারপাশে। পিঁপড়াগুলোকে চিনির লোভে নিজেদের চারপাশে এনে আদতে শুঁয়াপোকাগুলো ব্যবহার করে দেহরক্ষীর মতো। চিনির বিনিময়ে তাইতো পিঁপড়ার দল পাহারা দিয়ে রাখে এসব শুঁয়াপোকাকে বিভিন্ন শিকারী প্রাণীদের হাত থেকে।
![](https://static.wixstatic.com/media/1da808_0f8a822d8fa3473cbd076a177d7f98a4~mv2.jpg/v1/fill/w_980,h_1323,al_c,q_85,usm_0.66_1.00_0.01,enc_avif,quality_auto/1da808_0f8a822d8fa3473cbd076a177d7f98a4~mv2.jpg)
ছবিঃ প্রজাপতির শুঁয়াপোকার দুই স্তরের প্রতিরক্ষা। প্রথমত ক্যামোফ্লাজ, আর দ্বিতীয়ত চিনি জাতীয় রাসায়নিক ক্ষরণ করে চারপাশে পিঁপড়াদের আকৃষ্ট করে রাখা।
এক ধরণের মথের শুঁয়াপোকা আছে যাদের বুদ্ধিদীপ্ত আত্মরক্ষার কলাকৌশল দেখে অবাক হতে হয়। এসব শুঁয়াপোকা জাম গাছের পাতা খেয়ে থাকে। মজার ব্যাপার হলো এই শুঁয়াপোকাদের দেহের সামনের দিকে পৃষ্ঠীয় দিক বরাবর রয়েছে গোলাকার ও ফোলা মাংসল একটি সবুজ রঙের গঠন। এ গঠনটি দেখতে ঠিক যেনো কাঁচা জামের মতো। এসব শুঁয়াপোকার প্রধান শিকারী বিভিন্ন প্রজাতির পাখী। পাখীরা শুধু শুঁয়াপোকাই না, জাম ফলও খেয়ে থাকে। কিন্তু সাধারণত পাখীরা কেবল পাকা জামই খায়, কাঁচা জাম নয়। মথের শুঁয়াপোকাগুলো দেখতে ঠিক কাঁচা জামের মতো বলে খুব সহজেই বেঁচে যায় পাখীর আক্রমণ থেকে। কি দারুণ তাই নয় কি!
কোনো কোনো শুঁয়াপোকার শরীরে থাকে বড় বড় চোখের মতো দাগ। এসব চোখের মতো দাগ (Eye-marking) এদেরকে শিকারী প্রাণীর হাত থেকে আত্মরক্ষা দিয়ে থাকে। যে শুয়াপোকার শরীরের আই-মার্কিং যত বড় সে শুঁয়াপোকা তত সফলভাবে এড়াতে পারে শিকারীর আক্রমণ।
![](https://static.wixstatic.com/media/1da808_5d9304c011db4a5786ae21437df12e47~mv2.png/v1/fill/w_858,h_369,al_c,q_85,enc_avif,quality_auto/1da808_5d9304c011db4a5786ae21437df12e47~mv2.png)
কিছু শুঁয়াপোকা তো রীতিমতো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকে! অনেক প্রজাতির মথ আছে যাদের শুঁয়াপোকা বেশ রঙিন ও উজ্জ্বল দেখতে, এক দেখাতেই প্রেমে পড়ে যেতে হয়। কিন্তু এই রঙিন রুপের আড়ালে লুকিয়ে আছে বিষাক্ততা! এসব শুঁয়াপোকার দেহ থেকে নিঃসৃত হয় সায়ানাইড রাসায়নিক যার কারণে কোনো শিকারী প্রাণীরা এদের ধারেকাছে ঘেঁষে না। তবে আত্মরক্ষার এ কৌশলটির জন্য শুঁয়াপোকা দলের কিছু সদস্যকে করতে হয় আত্মত্যাগ। বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক একটি উদাহরণের সাহায্যে। ধরা যাক কোনো স্থানে এ শুঁয়াপোকার দশটি সদস্য রয়েছে যাদের প্রধান শত্রু পাখী। কোনো এক পাখী ধরা যাক ভুলক্রমে যেকোনো একটি শুঁয়াপোকার উপর আক্রমণ করে বসলো। কিন্তু শুঁয়াপোকার দেহের সায়ানাইড বিষের ক্রিয়ায় নাজেহাল দশা হবে পাখিটির। তিক্ত এই অভিজ্ঞতা পাখিটি মনে রাখবে যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন, একইসাথে পাখিটি তার দলের অন্য সদস্যদেরকেও সতর্ক করবে এসব শুঁয়াপোকাদের সম্পর্কে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পাখিটি এই শুঁয়াপোকাদের মনে রাখবে কিভাবে যাতে ভবিষ্যতে আবার চিনতে পারে? এই কাজের জন্যই এসব শুঁয়াপোকা এত উজ্জ্বল আর রঙিন হয়ে থাকে। এদের উজ্জ্বল আর বাহারী রঙের বেশভূষা দেখেই পাখিটি চিনতে পারবে এ শুঁয়াপোকাদের। প্রকৃতিতে সাধারণত অধিকাংশ উজ্জ্বল ও রঙিন প্রাণীই বিষাক্ত হয়ে থাকে। এই উজ্জ্বল রঙ শিকারীদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে –‘’আমি বিষাক্ত, আমার ধারেকাছে এসো না’’। জীববিজ্ঞানের ভাষায় বিষাক্ত প্রাণীদের এ উজ্জ্বল রঙে রঙিন হওয়াকে বলে এপোসেমাটিজম (Aposematism) আর এই উজ্জ্বল রঙকে বলা হয় এপোসেমাটিক কালার (Aposematic Color) ।
অনেক শুঁয়াপোকার শরীরজুড়ে থাকে ঘন লোমের আবরণ যা ছুঁলে ভয়ানক জ্বালাপোড়া হয় কারণ ওদের লোমের গোড়ারদিকে থাকে বিষগ্রন্থি আর লোমগুলো কাজ করে ঠিক বিষের সূচের মতো।
সিংহভাগ শুঁয়াপোকা স্থলজ হলেও গুটিকতক প্রজাতির মথের শুঁয়াপোকা স্থল ছেড়ে জলে বসবাসের জন্য অভিযোজিত হয়েছে যারা কচুরীপনা সহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ খেয়ে থাকে। জলে বসবাসের জন্য এ শুঁয়াপোকাদের দেহের দুইপাশে রয়েছে পালকের মতো ফুলকা যা এক চমকপ্রদ ও অবাককর বিষয়!
কয়েক প্রজাতির মথের শুঁয়াপোকার আত্মরক্ষার কৌশল দেখে যে কেউ প্রকৃতির অদ্ভুত সব খেল দেখে বিস্ময়ে অভিভূত হতে বাধ্য হবে নিশ্চয়। কারণ এ শুঁয়াপোকাগুলোর আকৃতি ঠিক যেনো পিঁপড়ার মতো। এতটা নিখুঁতভাবে এরা এদের গঠণ পিঁপড়ার মতো বানিয়ে নেয় যে দেখে পার্থক্য করা মুশকিল হয়ে পড়ে। এই চমৎকার ভেলকি দেখিয়ে এরা প্রতিহত করে শিকারী প্রাণীর আক্রমণ।
![](https://static.wixstatic.com/media/1da808_e32b7e41ca3c4d81b9d601601677f369~mv2.png/v1/fill/w_944,h_319,al_c,q_85,enc_avif,quality_auto/1da808_e32b7e41ca3c4d81b9d601601677f369~mv2.png)
পুত্তলী (পিউপা বা মূককীট) দশার যতসব কায়দাকানুনঃ
প্রজাপতি আর মথের শুঁয়াপোকা বেশ কয়েকবার খোলস বদলিয়ে পরিণত হয় পুত্তলী (পিউপা বা মূককীট) দশায়। বর্তমানকালে পিউপা (Pupa) শব্দটির বাংলা হিসেবে ‘মূককীট’ শব্দটি বহুলভাবে ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশের এক পতঙ্গবিদ ও প্রকৃতিবিদ গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য তাঁর বিখ্যাত বই ‘বাঙলার কীটপতঙ্গ’-তে পিউপা শব্দটির বাংলা হিসেবে ‘পুত্তলী’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন যেটি অনেক বেশী শ্রুতিমধুর। এ লেখায় তাই পুত্তলী শব্দটিই ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রজাপতি আর মথের জীবনের অন্যতম অসহায় ও সংকটপূর্ণ দশা হচ্ছে পুত্তলী দশা। এ দশায় এরা কোনো আহার গ্রহণ করে না। ধীরে ধীরে নানাবিধ শারীরবৃত্তিক পরিবর্তনের পর এ দশার শেষে এরা পরিণত হয় পূর্নাঙ্গ দশায়। এ দশাতেই এদের ডানা, ফুলের মধু খাওয়ার জন্য নলাকার প্রোবোসিস (Proboscis) বা জিহ্বা, এন্টেনা, জননাঙ্গ ইত্যাদি অঙ্গগুলো পরিপূর্ণভাবে বিকাশ লাভ করতে আরম্ভ করে। প্রজাতিভেদে পুত্তলী দশা কয়েক দিন থেকে বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। প্রজাপতিরা এ দশায় কোনো কোকুন তৈরি করে না। বিভিন্ন প্রজাপতি বিভিন্ন রকমের আত্মরক্ষার কায়দা দেখিয়ে থাকে পুত্তলী দশায়।
এইপফ্লাই (Apefly) নামের এক প্রজাতির প্রজাপতির পিউপা আছে যাদের দেখতে ঠিক যেনো কোনো বানর বা এইপ এর মুখের মতো। কয়েক প্রজাতির প্রজাপতির পুত্তলী আবার সবুজ বা উদ্ভিদের মতো বর্ণযুক্ত বলে সহজেই মিলিয়ে যায় প্রকৃতির সাথে (ক্যামোফ্লাজ) ।
পুত্তলী দশায় ভোজবাজি দেখাতে মথেরা যেনো অনেকগুণ বেশী পটু। অনেক প্রজাতির মথের পুত্তলী কোকুনের শক্ত আবরণী দিয়ে ঢেকে থাকায় শিকারী প্রাণীদের হাত থেকে বেঁচে যায়। বিভিন্ন প্রজাতির মথের কোকুনে আবার আছে বিভিন্ন রকমের বৈচিত্র্যতা। কোনো কোনো মথের কোকুন বেশ শক্তপোক্ত ও ঘন, কিছু কোকুন জালের মতো পাতলা, কিছু কোকুন দেখতে ঠিক কাপ-পেয়ালার মতো আবার কোনো কোনো মথ বাতাসের মাঝে ঝুলিয়ে রাখে কোকুন। অনেক প্রজাতির মথের পুত্তলী আবার পাতা মুড়িয়ে তার মধ্যে লুকিয়ে থাকে। কয়েক প্রজাতির মথ আছে যাদের পুত্তলী দশা ঘটে মাটির মধ্যে। কিছু প্রজাতি আবার মাকড়শার সাথে এক দারুণ সম্পর্ক ও লুকোচুরি খেলা খেলে থাকে। মথ ও প্রজাপতির শত্রুদের মধ্যে মাকড়শা অন্যতম। আর এজন্য মথ ও প্রজাপতি বিভিন্ন দশায় মাকড়শার হাত থেকে বাঁচার জন্য অসাধারণ সব কৌশল প্রদর্শন করে থাকে। কিছু প্রজাতির মথের কোকুন দেখতে ঠিক মাকড়শার বাসার মতো দেখতে হওয়ায় বোকা মাকড়সার দল এড়িয়ে যায় এদের। কিছু প্রজাতির পুত্তলী তো আরো কয়েকধাপ এগিয়ে নিজেদের দেহের অবয়ব কিংবা কারুকার্য ঠিক মাকড়শার মতো বানিয়ে নেয় যাতে মাকড়সার হাত থেকে বেঁচে যায় সহজেই।
কখনো আবার বিভিন্ন মথের পুত্তলী উন্মুক্তভাবেই ঝুলে থাকে গাছের পাতার সাথে অনেকটা ‘’স্রষ্টা ভরসা” এমনভাবে।
![](https://static.wixstatic.com/media/1da808_49d5e3a1bb96483e9f9efa3b7c62ab9b~mv2.png/v1/fill/w_980,h_296,al_c,q_85,usm_0.66_1.00_0.01,enc_avif,quality_auto/1da808_49d5e3a1bb96483e9f9efa3b7c62ab9b~mv2.png)
পূর্ণবয়স্ক দশার দারুণ সব কাণ্ডঃ
পুত্তলী দশা শেষে প্রজাপতি ও মথ বেরিয়ে আসে সম্পূর্ণ রুপান্তর শেষে। আর এ দশাতেই হয় এদের জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, প্রজনন। এজন্য যত রকমের সম্ভাব্য আত্মরক্ষার উপায় আছে তার সবই দেখতে পাওয়া যায় এ দশায়। আলোচনার সুবিধার্থে আত্মরক্ষার কৌশলগুলোকে কয়েকটি শিরোনামে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে ভাগ করে উল্লেখ করা হলো।
![](https://static.wixstatic.com/media/1da808_6af0512e05494b2cbb2d61e67044d38c~mv2.png/v1/fill/w_748,h_515,al_c,q_90,enc_avif,quality_auto/1da808_6af0512e05494b2cbb2d61e67044d38c~mv2.png)
ক। আই-মার্কিং (Eye-marking)ঃ পূর্ণবয়স্ক দশাতেও বিভিন্ন প্রজাতির মথ ও প্রজাপতির ডানায় ছোটো বড় নানান আকৃতি, আকার ও বর্ণের আই-মার্কিং বা চোখের মতো কারুকাজ দেখতে পাওয়া যায়। এ কারুকাজের দ্বারা এরা শিকারী প্রাণীদের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে থাকে। নিশাচর কিছু মথ আছে যাদের ডানার আই-মার্কিং ও দৈহিক গড়নের জন্য দেখে ছোটোখাটো পেঁচার মতো মনে হয় যা দেখে ভয়ে পালায় শিকারী প্রাণীরা।
খ। ক্যামোফ্লাজঃ অনেক প্রজাপতি ও মথ উদ্ভিদের বাকল, পাতা, ডালপালার মতো রঙের হওয়ায় সহজেই মিলিয়ে যেতে পারে প্রকৃতির সাথে। কিছু প্রজাতির মথ ও প্রজাপতি আছে যাদের দেখতে হুবহু গাছের শুকনো পাতার মতো মনে হয়!
গ। মিমিক্রি (Mimicry)ঃ মিমিক্রি কথাটির সহজ অর্থ হচ্ছে অনুকরণ করা। জীববিজ্ঞানের ভাষায় মিমিক্রি বলতে বোঝায় যখন এক প্রজাতির প্রাণী আকারে, আকৃতিতে, বর্ণে, গন্ধে কিংবা আচরণে অন্য প্রজাতির প্রাণী বা নিজ প্রজাতির বিপরীত লিঙ্গের সদস্যকে অথবা নিজ দেহের এক অংশ অন্য অংশকে অনুকরণ করে। আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস ও চার্লস রবার্ট ডারউইন উভয়েই একইসাথে অন্যান্য জীববিজ্ঞানীরা প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ ব্যাখ্যা ও আলোচনার সময় ব্যাপকভাবে প্রজাপতি ও মথের মিমিক্রি বিষয়গুলোকে ব্যবহার করেন। মিমিক্রি কয়েক রকমের হতে পারে। যেমনঃ
Ø অটো-মিমিক্রিঃ কিছু প্রজাতির প্রজাপতি আছে যাদের ডানার পেছনের দিকে লম্বা লেজের মতো উপবৃদ্ধি ও চোখের মতো কারুকাজ দেখা যায়। এসবের জন্য এদের ডানার এ অংশটিও দেখতে ওদের মাথার মতো মনে হয়। যেনো ওদের দেহের সামনে পেছনে দুইদিকেই মাথা! কিছু শিকারী প্রাণী আছে যারা দেহের পেছনের দিক দিয়ে আক্রমণ করে থাকে কিন্তু এসব প্রজাপতির পেছনের দিকেও নকল মাথার গঠন থাকায় বিভ্রান্ত হয় শিকারী প্রাণী। কখনো আবার অনেক শিকারী প্রাণী মাথার দিক দিয়ে আক্রমণ করে বসে। এ সমস্যা এড়াতে এসব প্রজাপতি বিশ্রাম কালীন আসল মাথার দিক বাঁচিয়ে নকল মাথার দিককে বাইরের দিকে উন্মুক্ত করে রাখে। শিকারী প্রাণী ভুলক্রমে নকল মাথার দিকে আক্রমণ করলে ডানা ভেঙে গেলেও সুরক্ষিত থাকে মাথা ও দেহ। এই যে নিজ দেহের এক অংশের গঠন আরেক অংশের অনুকরণে সজ্জিত, এ বিষয়টিকে বলা হয় অটো-মিমিক্রি।
Ø বেইটসিয়ান মিমিক্রি (Batesian Mimicry)ঃ কয়েকটি উদাহরণ দেয়া যাক-
১। কিছু প্রজাতির মথ আছে যারা একেবারে নির্বিষ ও নিরীহ। কিন্তু ওদের গায়ের আকৃতি দেখতে হুবহু বোলতার মতো।
২। এটলাস মথ নামের আরেক ধরণের বড় আকারের নির্বিষ ও নিরীহ মথ আছে যাদের ডানার উপরের দিকের অংশ অনেকটা সাপের ফনার মতো।
৩। অনেক ধরণের মথ ও প্রজাপতি আছে যাদের ডানার কারুকাজে মাকড়শার মতো চোখ ও পা ফুটে ওঠে যদিও এ মথগুলো মাকড়শার মতো বিষাক্ত নয়।
৪। কমন মরমোন নামে এক প্রজাতির নির্বিষ প্রজাপতি পাওয়া যায় আমাদের দেশে। এ প্রজাপতির স্ত্রী সদস্যদের ডানার কারুকাজ দেখতে কমন রোজ নামক আরেক প্রজাতির বিষাক্ত (এ বিষ পাখী, সরিসৃপ ও শিকারী প্রাণীদের উপর প্রভাবশালী, মানুষের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয়) প্রজাপতির মতো। ভারতীয় গবেষকদের গবেষণায় দেখা গেছে যে জিনটি প্রজাপতি ও মথের লিঙ্গ নির্ধারন করে (doublesex gene) সে জিনটিই কমন মরমোন প্রজাপতির ডানায় কমন রোজ প্রজাপতির মতো বর্ণ তৈরির জন্য দায়ী। কি বিচিত্র এই প্রকৃতি!
উপরের চারটি উদাহরণে দেখা গেলো এখানে নির্বিষ ও নিরীহ প্রজাপতি ও মথ বিভিন্ন বিষাক্ত ও ভয়ানক প্রাণীদের মতো বেশভূষা ধারণ করে আত্মরক্ষার জন্য। এ ধরণের মিমিক্রি প্রথম আলোচনা করেন ইংরেজ প্রকৃতিবিদ হেনরি ওয়ালটার বেইটস যার নামানুসারে এটি বেইটসিয়ান মিমিক্রি নামে পরিচিত।
Ø মুয়েলেরিয়ান মিমিক্রি (Müllerian mimicry)ঃ একটি উদাহরণ দেখা যাক। দ্রুরির জুয়েল (Drury’s Jewel) নামে এক প্রজাতির বিষাক্ত মথ আছে যাদের ডানার কারুকাজ মিল্কউইড প্রজাপতি (Milkweed butterfly) নামক বিষাক্ত প্রজাপতির মতো। এখানে উভয় সদস্যই বিষাক্ত কিন্তু এক পারস্পরিক অনুকরণের দ্বারা প্রতিহত করে শিকারী প্রাণীদের। এ ধরণের মিমিক্রি সম্পর্কে প্রথম আলোচনা করেন জার্মান প্রাণিবিদ জোহান ফ্রিডরিশ থিওডর মুয়েলার (Johann Friedrich Theodor Müller) যার নামানুসারে এটি মুয়েলেরিয়ান মিমিক্রি নামে পরিচিত।
ঘ। অন্যান্যঃ কিছু প্রজাতির মথ আছে যাদের ডানার কারুকাজ ঠিক যেনো পাখির মলের মতো। কিছু প্রজাতির মথ তো আরো একধাপ এগিয়ে। ওদের ডানার কারুকাজ শুধু যে পাখীর মলের মতো এমনটাই নয়, মলের কারুকাজের উপর থাকে মাছি আকৃতির দাগ আর এসব মথের গায়ের গন্ধও ঠিক মলের মতো। এমন নিখুঁত আর অদ্ভুত আত্মরক্ষা কৌশল বোধ হয় প্রাণিজগতে খুব বেশী আর নেই!
![](https://static.wixstatic.com/media/1da808_c561ffab34e84213b02f964d819c779b~mv2.png/v1/fill/w_779,h_553,al_c,q_90,enc_avif,quality_auto/1da808_c561ffab34e84213b02f964d819c779b~mv2.png)
তথ্যসূত্রঃ 1. Ehrenberg, R. 2011. Plants and predators pick same poison, Caterpillars and their hosts independently evolved identical recipe for cyanide. Science News. (retrieved from: www.sciencenews.org) 2. Huis, A. 2019. Cultural significance of Lepidoptera in sub-Saharan Africa. Journal of Ethnobiology and Ethnomedicine. 15:26. 3. Kandori, I. et al. 2022. Long horns protect Hestina japonica butterfly larvae from their natural enemies. Scientific Reports 12, 2835. 4. Kehimkar, I. 1997. Moths of India: An Introduction. Vigyan Prasar & Sanctuary Magazine. 5. Khan, M.K. 2020. Bagworm decorations are an anti‐predatory structure. Ecological Entomology 45 (5): 1-5. 6. Kristensen, N.P. (ed.). 2003. Handbuch der Zoologie/Handbook of Zoology IV/36: Lepidoptera: Moths and butterflies 2. Walter de Gruyter, Berlin & New York. 7. Kunte, K. et al. 2014. doublesex is a mimicry supergene. Nature. 13; 507 (7491): 229-232. 8. Poulton, E. B. Sir. 1890. The Colours of Animals, their meaning and use, especially considered in the case of insects. New York, D. Appleton and company. 9. Singh, N. et al. 2022. Settling moths are the vital component of pollination in Himalayan ecosystem of North-East India, pollen transfer network approach revealed. Scientific Reports. 12, 2716. 10. Turlings, T.C.J. & Erb, M. 2018. Tritrophic Interactions Mediated by Herbivore-Induced Plant Volatiles: Mechanisms, Ecological Relevance, and Application Potential. Annu. Rev. Entomol. 7(63):433-452. ছবি কৃতজ্ঞতাঃ আদিত্য কর্মকার (ত্রিপুরা), সৌরভ দোয়ারী (পঃবঙ্গ) ও ইন্টারনেট।
Comments