পুবের ঘরের বুবুজান সেবার আফসোস করে বলেছিলেন-
"আকাশ বাতাস তন্ন করি খুঁজিয়াও
পাইনি তাহার দেখা-
গতরের চামড়া ঝুলিয়া গিয়াছে,
কপালে পড়িছে রেখা!
চক্ষের জ্যোতি গিয়াছে কমিয়া
চলন-বলন গিয়াছে থামিয়া
রূপ যৌবন! ও তো কবেই শেষ
অপেক্ষায় তাহার বাঁচিয়া আছি এই বেশ!"
গতবার পূজোর ছুটিতে দেখা মতি পাগলার সনে,
বিড়বিড় করে কি জানি কি বলছিলো নিজ মনে-
কাছে যেতেই জোর আওয়াজে-
"এই হাতে তাহারে গোসল দিয়াছি
এই হাতে দিয়াছি দাফন
এই হাতেই মোর খুশবু লাগাইয়া
পড়াইয়াছি সাদা কাফন
চলিয়া গিয়াছে ফেলিয়া মোরে
ঘুমাইয়া রইয়াছে আন্ধারে
কবরে গিয়া ডাকিয়াছি কত
সাড়া দেয় নাই আর মোরে!"
ব্যস্ত ছিলাম আপন কাজে।
অইদিন দেখা ছবের আলীর সঙে-
মতি মিয়ার চায়ের টঙে-
ঘুরে ফিরে সেই চিরচেনা কথা-
"পিসকিশনের এই এক নাম্বার টা
হাজার করিয়া বোতল
কিনিতে পারি নাই অর্থ অভাবে
মরিয়াছে মোর পোতুল
আষ্ট বছরের কইন্যা আমার
চান্দের মতন মুখ
এই কোলে নিয়াই লাশখানি তার
কান্দিয়া ভাসাইছি বুক!"
সেদিন প্রাতে ফখার সাথে হঠাৎ করেই দেখা-
"ভিটামাটি সব কাড়িয়াও
হয়নি তাহার সুখ
গত পাঁচ বছর পথে পথে ঘুরি
দেখিনি মায়ের মুখ
দেখা পাইলে তাহার জানাইয়া দিও
মোর হইয়া একখান কথা।
হারানোর জ্বালা ভীষণ জ্বালা
বড় কঠিন তাহার ব্যথা!
হারাইয়াছে যে বোঝে সে-ই কেবল
বিচ্ছেদের কি বেদন
পাগলের মত ছুটিয়াছি কত
করিয়াছি কত রোদন
ফিরিয়া আসে না হারায় যেই জন
দেয় না তো আর দেখা
বুকের মধ্যে পড়িয়া থাকে
কত ব্যথা! কত জমানো কথা!"
সব শুনে আর সব দেখে আমি তাকাই আকাশপানে
লুকিয়ে আছে কার আপনজন কে জানে কোন খানে!
-আচার্যনন্দন (মোঃ জহির রায়হান)
১২.০৫.২০১৮
Comments